আমরা জানি, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি মানুষ, জীব-জন্তু, সাগর-নদী-পাহাড়, বৃক্ষলতা- ফুল-ফল, আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা – সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। ঈশ্বর স্রষ্টা— জীব ও জগৎ তাঁর সৃষ্টি।
ঈশ্বরের আরেক নাম পরমাত্মা। তিনি জীবের মধ্যেও অবস্থান করেন। জীবের মধ্যে অবস্থানকারী ঈশ্বরকে আত্মা বলে। ঈশ্বর জীবদেহে আত্মারূপে অবস্থান করে জীবকে পরিচালনা করেন। তাই জীবও ঈশ্বর।
আমরা ঈশ্বরের সেবা করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। জীবনে চলার পথে তাঁর করুণা লাভ করতে চাই, যাতে আমাদের মঙ্গল হয়। তাই আমরা ঈশ্বরের স্তব- স্তুতি করি। ঈশ্বরকে আমরা কাছে পেতে চাই। কিন্তু ঈশ্বর নিরাকার। তাঁকে দেখা যায় না। তাঁর শক্তি ও গুণের প্রকাশকে প্রত্যক্ষ করা যায় মাত্র।
আমরা আরেকভাবে ঈশ্বরের সেবা করতে পারি। তা হলো জীবসেবা। ঈশ্বর আত্মারূপে জীবের মধ্যে অবস্থান করেন, তাই জীবের সেবা করলে তা ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়। এভাবে জীবসেবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করা যায়। তাই তো বলা হয়েছে ‘যত্র জীবঃ তত্র শিবঃ।' যেখানে জীব, সেখানেই শিব। এখানে শিব মানে ঈশ্বর। এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,
‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ।
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।'
এর মর্মার্থ হলো, ঈশ্বর জীবরূপে আমাদের সম্মুখে আছেন। তাঁকে বাইরে খোঁজার দরকার নেই। যিনি জীবের সেবা করেন, তিনি জীবসেবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরেরই সেবা করেন।
সুতরাং জীবসেবাও ধর্ম। তাই আমরা জীবসেবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করব। আমরা দরিদ্রের সেবা করব, আমরা পীড়িত ও আর্তের সেবা করব।
আমরা পোষা জীবজন্তুর পরিচর্যা করব। গাছপালা রোপণ করব। সেগুলোর পরিচর্যা করব। এভাবে আমরা জীবকে ঈশ্বর-জ্ঞানে সেবা করব। এতে জীবের মঙ্গল হবে। জীবসেবা করে নিজেরা শান্তি পাব। ঈশ্বরও সন্তুষ্ট হবেন ।
তোমার নিজের বা অন্যের জীবসেবার ঘটনা বর্ণনা কর।
এখন ধর্মগ্রন্থ মহাভারত থেকে জীবসেবার একটি উপাখ্যান শোনাচ্ছি :
কুরুক্ষেত্র এ উপমহাদেশের একটি পবিত্র স্থান। কুরুক্ষেত্রকে ধর্মক্ষেত্রও বলা হয়। সেই কুরুক্ষেত্রে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ ছিলেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে তাঁর ছোট সংসার ।
কিন্তু সংসার ছোট হলে কী হবে! কোনোদিন তাদের খাওয়া জুটত, কোনোদিন আধপেটা থাকতে হতো। কোনোদিন একেবারেই না খেয়ে থাকতে হতো। কারণ ব্রাহ্মণ ধর্মসাধনা ও বিদ্যাচর্চায় সময় কাটাতেন। উঞ্ছবৃত্তি করে খাবার সংগ্রহ করতেন। উঞ্ছবৃত্তি হচ্ছে জমির ধান কেটে নেওয়ার পর জমিতে যা দু-এক ছড়া পড়ে থাকে, তা কুড়িয়ে নিয়ে তা দিয়ে খিদে মেটানো।
একক কাজ : ‘উঞ্ছবৃত্তি' কথাটি বোঝাও
একদিনের কথা।
ব্রাহ্মণ কোনো খাবার জোটাতে পারছেন না। খুবই খিদে পেয়েছে। স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউও না খেয়ে আছে। পরে অতিকষ্টে কিছু যব সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ব্রাহ্মণপত্নী সেই যব দিয়ে ছাতু বানালেন। তারপর সেই ছাতু চারভাগে ভাগ করলেন। চারজনে খাবেন। ব্রাহ্মণ খেতে বসলেন ৷
এমন সময় সেখানে এলেন আরেক দরিদ্র ব্রাহ্মণ। তিনি জানালেন, আমরা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়েছি। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। এখন আমি খুবই ক্ষুধার্ত।
ব্রাহ্মণ অতিথি ব্রাহ্মণকে হাতমুখ ধোয়ার জল দিলেন। বসার আসন দিলেন। পানীয় জল দিলেন। ক্লান্তি দূর হলো অতিথির। তারপর ব্রাহ্মণ নিজের ভাগের ছাতু অতিথিকে পরিবেশন করলেন। অত অল্পতে পেট ভরে! ব্রাহ্মণপত্নী তাঁর নিজের ভাগের ছাতুও দিয়ে দিলেন। এভাবে অতিথি ব্রাহ্মণের খিদে মেটাতে ব্রাহ্মণের পুত্রও তার ভাগের ছাতু দিয়ে দিলেন।
তবু খিদে মিটল না অতিথি ব্রাহ্মণের ।
‘আর আছে ?’ -জিজ্ঞেস করলেন তিনি ৷
তখন ব্রাহ্মণের পুত্রবধূর ভাগের ছাতু অতিথির পাতে পরিবেশন করা হলো ।
এভাবে ব্রাহ্মণ, তার স্ত্রী, পুত্র আর পুত্রবধূ নিজেরা ক্ষুধার্ত হয়েও জীবসেবার জন্য নিজেদের সামান্য খাদ্যও দান করলেন ।
অতিথি ব্রাহ্মণ খুশি হয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
‘তোমাদের সেবায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।’ - বললেন অতিথি ব্রাহ্মণ। সবাই তাকালেন তাঁর দিকে।
কোথায় ব্রাহ্মণ !
এ যে স্বয়ং ধর্মদেব ।
‘তোমাদের পরীক্ষা করতে এসেছিলাম। ’ -বললেন ধর্মদেব।
জীবসেবার এই আদর্শ আমরাও যেন মনেপ্রাণে ধারণ করি।
শূন্যস্থান পূরণ কর :
১। আমরা জানি, ___.সর্বশক্তিমান ।
২। ঈশ্বর সকল ___ মধ্যে আছেন।
৩। জীবের ___ করলে ঈশ্বরের সেবা করা হয়।
৪। কুরুক্ষেত্রকে ___ বলা হয়।
৫। ব্রাহ্মণ ___ আদর্শ স্থাপন করেছিলেন।
ডান পাশ থেকে শব্দ এনে বাম পাশের শব্দের সঙ্গে মেলাও :
১। জীবও ২। ঈশ্বর ৩। আমরা স্তব-স্তুতি করি ৪। যত্র জীবঃ ৫। অতিথি খেয়েছিলেন ৬। প্রার্থনা করতে হয় | ঈশ্বরের। তত্র শিবঃ। ছাতু। মিষ্টান্ন । ঈশ্বর । আত্মারূপে জীবের মধ্যে থাকেন । শ্রদ্ধার সঙ্গে। |
নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষেপে উত্তর দাও :
১। আত্মা বলতে কী বোঝ ?
২। জীব বলতে কী বোঝ?
৩। ব্রাহ্মণের আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল?
৪। ধর্মদেব অতিথি হয়ে এসেছিলেন কেন ?
৫। আমরা কার সেবা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি ?
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
১। ঈশ্বর ও জীবের সম্পর্ক বুঝিয়ে লেখ।
২। আমরা জীবসেবা করব কেন?
৩। কীভাবে জীবের সেবা করা যায়?
৪। ব্রাহ্মণকে অতিথি ব্রাহ্মণ এসে কী বলেছিলেন ?
৫। ব্রাহ্মণ ও তাঁর পরিবারের সবাই নিজেরা না খেয়ে অতিথি ব্রাহ্মণকে খাইয়েছিলেন কেন ?
ধর্মদেব
বিষ্ণু
শিব
ইন্দ্ৰ
আরও দেখুন...